দেশে সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় র্যাবের গুলিতে একজন ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অন্য একজনের মরদেহ উদ্ধার এবং পুলিশের গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের পাঠানো ‘মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন সেপ্টেম্বর ২০২২’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি আটকের ঘটনাও রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে পাঁচজন নাগরিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেপ্টেম্বরে পুলিশ হেফাজতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারা হেফাজতে মৃতদের মধ্যে ছয়জন কয়েদি ও আটজন হাজতি রয়েছেন। কারাগারে অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারণে অসুস্থ অধিকাংশ বন্দিকে কারাগারের বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।
এমএসএফ মনে করে, কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণে নামে যে অপতৎপরতা চলছে তা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের চিত্র।
এমএসএফ এ ধরনের ঘটনায় আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে জানানোর পাশাপাশি ভিকটিমদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকা রাখার দাবি জানাচ্ছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনাসহ নাগরিক জীবনে উৎকণ্ঠা বেড়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যকার সংঘাত-হিংস্রতা নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্রমাগত রাজনীতির ওপর থেকে জনগণ আস্থা হারাচ্ছে।
‘বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে সমাবেশ ও শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, গুলি, গ্যাসের শেল, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে হতাহতের মতো ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি কমেনি, উল্টো অপব্যবহারের বিষয়টি এ মাসে নতুন মাত্রায় ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বলে জানায় সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় একজন কিশোর, দুইজন রাজনৈতিক কর্মী, তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও একজন যুবকসহ মোট সাতজন গ্রেফতার হয়েছে। এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১২টি মামলা করা হয়েছে।
সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ১৯ জন সাংবাদিক নানাভাবে অপমান, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রকাশিত সংবাদের জন্য দুজন সাংবাদিকের নামে মামলা, একজনকে প্রাণনাশের হুমকি ও তিনজন পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়েছেন। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার সামিল।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকার যেভাবে খর্ব করা হচ্ছে, তা শুধু বাক স্বাধীনতা দমন মানবাধিকার লঙ্ঘনই করে না, যে কোনো সংকট মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টাকেও বাধাগ্রস্ত করে বলে জানায় এমএসএফ।