জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতার ব্যক্তির নাম- আনোয়ারুল ইসলাম সাগর ওরফে ফোরকান ওরফে সাগর মৃধা। তিনি এক ব্যক্তির কাছ থেকেই সাড়ে ৩২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মো. গোলাম রাব্বী সরকার নামের একজন ভুক্তভোগী বসুন্ধরা বারিধারার এভারকেয়ার হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিফ ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। গ্রেফতার সাগর মৃধা হাসপাতালে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এসে ভুক্তভুগীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সুযোগে তিনি ভুক্তভোগীকে জানান, তাদের সচিবদের একটি অ্যাসোসিয়েশন আছে। যারা আমদানি করা গাড়ি পোর্ট থেকে বিভিন্ন পন্থায় স্বল্প ব্যয়ে বের করে বিক্রি করে থাকে।
এটি একটি লাভজনক ব্যবসা দেখিয়ে টাকা বিনিয়োগ করার জন্য ভুক্তভুগীকে প্রলোভন দেখায়। এই ফাঁদে পা দিয়ে ২০২১ সালের ১০ জুন ওই অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ পেতে সাগর মৃধাকে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন ভুক্তভোগী।
এছাড়াও এভারকেয়ার হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের জয়েন্ট কেয়ার অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের সব চিকিৎসক এবং অফিস স্টাফদের নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় সুযোগ সুবিধা নিতেন ওই ব্যক্তি।
এডিসি মো. নাজমুল হক জানান, পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার ব্যক্তি ২০২২ সালে পদোন্নতি পেয়ে উপ-সচিব থেকে যুগ্ম-সচিব হন বলে ভুক্তভুগীকে জানান। তিনি বিভিন্ন পদে সরকারি চাকরি দিতে পারবেন বলে ভুক্তভোগীকে প্রলোভন দেখান। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ক্রাফ্ট ইন্সট্রাক্টরের (সোপ) নিয়োগ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অফিস করণিক পদে বেসামরিক কর্মচারী নিয়োগ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ লাখ টাকা দেন ভুক্তভোগী। তিনি সরল বিশ্বাসে ওই টাকা দেওয়ার পর গ্রেফতার ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন সাড়ে ৩২ লাখ টাকা।
এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী গোলাম রাব্বী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রমনা থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
তিনি আরও বলেন, মামলাটি তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর রমনা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ও একটি ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
প্রতারণা এড়াতে গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরামর্শ-
> অপরিচিত ব্যক্তির দেওয়া কোনো লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়া।
> কোথাও লেনদেনের আগে তার সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাইপূর্বক লেনদেন করা।
> কারও সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে তার সঙ্গে সুসম্পর্কে জড়ানো অনুচিত।
> অবৈধ পন্থায় চাকরি পাওয়ার চেষ্টা না করা।