দেশে শতকরা ৮৭ শতাংশ পর্যটক হয়রানির শিকার হন বলে এক জরিপে জানিয়েছে সবুজ আন্দোলন নামের এক পরিবেশবাদী সংগঠন।
আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। বিভিন্ন পর্যটন এলাকাসমৃদ্ধ ১১টি জেলায় সবুজ আন্দোলনের কর্মীরা জরিপ চালিয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করেন বলে জানায় সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আর খান, সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, নাগরিক টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার ও মেঘবতী রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু হামিদ, টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী তানিয়া রশিদ, ইকো কনসার্ন অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী সাইফুর রহমান খোকন প্রমুখ।
এতে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সব থেকে সম্ভাবনাময়ী খাত পর্যটন শিল্প। সব থেকে অবহেলিত খাতও পর্যটন শিল্প। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটন খাতের উন্নয়ন করতে পারলে বাংলাদেশের জিডিপিতে ২০ ভাগ পর্যন্ত অবদান রাখতে পারে। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও হোটেল-মোটেলের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাপ্পি সরদার বলেন, আমরা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ১১ জেলায় সবুজ আন্দোলনের কর্মীদের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে দেখা গেছে, শতকরা ৮৭ জন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে বিদেশি গাছ রোপণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এগুলো অচিরেই বন্ধ করতে হবে।
এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো- প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না এবং দেশীয় প্রজাতি গাছের চারা রোপণে বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টুরিস্ট পুলিশের আধুনিকায়ন, অর্থ বরাদ্দ ও লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় পর্যটন দিবস ঘোষণা, পর্যটন খাতকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি এবং পাঠ্যপুস্তকের সর্বস্তরে পর্যটন শিল্পের প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্প্রসারণ করতে দূতাবাসগুলোতে আলাদা ডিপার্টমেন্ট চালু এবং বিদেশি বিনিয়োগ আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের নীতিমালা শিথিল করতে হবে।
এছাড়াও, সরকারিভাবে বাংলাদেশে কতগুলো পর্যটন স্পট আছে এবং আগামীতে নতুন স্পট আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গবেষণা জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আধুনিকায়ন, উন্নত যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা এবং পর্যটকদের জন্য আবাসন ও রুচিসম্পন্ন সম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন করপোরেশন, পর্যটন মন্ত্রণালয় ও যুব মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে ‘স্বাধীন টুরিস্ট বোর্ড’ চালু করতে হবে। পর্যটকদের সঠিক পরামর্শ ও গাইড করার জন্য প্রশিক্ষিত গাইডার তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং হয়রানি বন্ধে বিধি-নিষেধ জারি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- সবুজ আন্দোলনের পরিচালক অভিনেতা উদয় খান, অর্থ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশ, সহ অর্থ সম্পাদক সালমা আক্তার শান্তা, ময়মনসিংহ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মির্জা হামিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি জোসনা আক্তার মুন্নি, মৌলভীবাজার জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মিতালী দাস, ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব এইচএম বাকিবিল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক সোহাগ খান, গোপালগঞ্জ জেলার সদস্য রুবিনা আক্তার রেঞ্জু প্রমুখ।