সময়ের পরিক্রমায় বহু নাম পেয়েছে কাজাখস্তানের রাজধানী। ১৮৩০ সালে রুশ সামরিক বাহিনীর ফাঁড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সময় আকমোলিনস্ক নামে যাত্রা শুরু করেছিল এটি। তবে ১৯৬১ সালে সোভিয়েত সম্প্রসারণের কেন্দ্র হিসেবে শহরটির নাম হয়ে যায় সেলিনোগ্রাদ, রুশ ভাষায় যার অর্থ ‘কুমারী ভূমির শহর’। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে স্বাধীন কাজাখস্তান আবির্ভাবের সময় এর নতুন নামকরণ হয় আকমোলা বা ‘সাদা সমাধি’। কিন্তু ১৯৯৮ সালে দেশটির রাজধানী হওয়ার পরপরই ফের বদলে যায় শহরটির নাম। এবার রাখা হয় আস্তানা বা ‘রাজধানী’।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই নামেই পরিচিত ছিল কাজাখ রাজধানী। কিন্তু সে বছর আবারো পরিবর্তনের পরে শহরটির নতুন নাম হয় নুর-সুলতান। কাজাখস্তান স্বাধীনতালাভের পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করা নুরসুলতান নজরবায়েভের সম্মানে এই নাম রাখা হয় রাজধানীর। ওই বছর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন নজরবায়েভ।
এর মধ্যেই সবচেয়ে বেশিবার নামপরিবর্তন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখায় কাজাখ রাজধানী। তবে সেখানেও থামেনি শহরটি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবারও আস্তানা নামে ফিরে গেছে এটি। অর্থাৎ নুর-সুলতান ‘আউট’, আস্তানা ‘ইন’।
কাজাখ রাজধানীর নাম নুর-সুলতান রেখেছিলেন নুরসুলতান নজরবায়েভেরই নির্বাচিত উত্তরসূরী কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত একসঙ্গে দেশ শাসন করেছেন তারা।
তবে বছরের শুরুর দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণ হারান প্রায় ২৩০ জন। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাশিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য হন তোকায়েভ। নজরবায়েভের ঘনিষ্ঠরা সহিংসতাকে উসকে দেওয়ায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে সেসময়। তোকায়েভ বলেন, এই অস্থিরতা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টা ছিল। যদিও এতে জড়িত কারও নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
কিন্তু রাজধানী থেকে নজরবায়েভের নাম সরিয়ে ফেলাই সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ যে, তার গড়ে তোলা সংস্কৃতি বদলে ফেলা হচ্ছে। গত জুনে রাজনৈতিক সংস্কার সংক্রান্ত একটি গণভোটে তার অবশিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হয়। চলতি সেপ্টেম্বরে কাজাখ সরকার নজরবায়েভের সম্মানে সরকারি ছুটি হিসেবে ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি দিবস’ উদযাপন বাতিল করেছে। তার আত্মীয়দেরও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে।
সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে ‘গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, জুনে অনুষ্ঠিত গণভোটে অনুমোদন পাওয়া সংস্কারগুলো রাজনৈতিক বিরোধিতাকে বিকশিত করার সুযোগ দেবে। যদিও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি আরও একটি বড় সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের শাসনকালের সংখ্যা দুই থেকে কমিয়ে এক এবং শাসনকালের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর করা হয়েছে। কালবিলম্ব না করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে কাজাখ পার্লামেন্ট।
গত ২১ সেপ্টেম্বর তোকায়েভ ঘোষণা দিয়েছেন, পূর্বনির্ধারিত সময়ের প্রায় ১৮ মাস আগে আগামী ২০ নভেম্বর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে তিনি ভূমিধস জয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সমালোচকরা তোকায়েভের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচনে জিতলে তার সাত বছরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৯ সালে। কিন্তু তোকায়েভ যদি পুরোনো নিয়মে দু’বার পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্বপালন করতেন, তাহলে তিনি ক্ষমতা ছাড়তেন এর চেয়ে মাত্র পাঁচ মাস আগে।
নতুন সংবিধানের অধীনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় না থাকার অঙ্গীকার করেছেন কাজাখ প্রেসিডেন্ট। তবে রাজধানীর নাম আবারও বদলাবেন না, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি তিনি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট